সমকোণী ত্রিভুজ কাকে বলে

যদি একটি ত্রিভুজের যেকোনো একটি কোণের মান ৯০ ডিগ্রি হয় সেটাই সমকোণী ত্রিভুজ

আজকে আমরা জানবো সমকোণী ত্রিভুজ কাকে বলে, সমকোণী ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য এবং সমকোণী ত্রিভুজ সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি। তাই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইলো।

সমকোণী ত্রিভুজ কথার অর্থ

আমরা জানি যে কোন ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০°। সমকোণ কথার অর্থ হল একটি কোণ ৯০ ডিগ্রী হবে।

সমকোণী ত্রিভুজ কাকে বলে

যে ত্রিভুজের যেকোনো একটি কোণের মান ৯০ ডিগ্রী বা এক সমকোণ সেই ত্রিভুজ কে সমকোণী ত্রিভুজ বলে।

একটি সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণ ছাড়া বাকি দুটি কোণের প্রত্যেকটির মান ৯০ ডিগ্রী অপেক্ষা ছোট হয়। অর্থাৎ বাকি দুটি কোণ হয় সূক্ষ্মকোণ।

সমকোণী ত্রিভুজের বাকি দুটি সূক্ষ্মকোণের সমষ্টি হয় ৯০ ডিগ্রী।

যেহেতু সকল ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি মান হয় ১৮০° বা দুই সমকোণ বা ১ সরল কোণ তাই কোন ত্রিভুজের সর্বাধিক একটিমাত্র সমকোণ থাকতে পারে।

যেকোনো সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণের সন্নিত বাহু দুটির একটিকে ভূমি এবং অপরটিকে লম্বা বলে। সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণের বিপরীত বাহুকে অতিভুজ বলা হয়।

ত্রিভুজি হল সমকোণী ত্রিভুজের বৃহত্তম বাহু। ভূমি ও লম্বা বাহু দুটি সব সময় অতিভুজের অপেক্ষা দৈর্ঘ্যে ছোট হয়।

ত্রিভুজের প্রকারভেদ এর মধ্যে সমকোণী ত্রিভুজ হল কোন ভেদে ত্রিভুজের একটি উদাহরণ

সমকোণী ত্রিভুজের উদাহরণ

ABC একটি ত্রিভুজ তার কোণ A এর মান ৯০°। অতএব, ABC একটি সমকোণী ত্রিভুজ।

সমকোণী ত্রিভুজের অপর নাম কি

যেকোনো ত্রিভুজের ন্যায় সমকোণী ত্রিভুজের তিনটি বাহুর দৈর্ঘ্য অর্থাৎ ভূমি লম্ব এবং অতিভুজ এর দৈর্ঘ্য পূর্ণ সংখ্যা হতে পারে আবার ভগ্নাংশ বা দশমিক সংখ্যা ও হতে পারে।

সমকোণী ত্রিভুজের বাহু তিনটির দৈর্ঘ্য কে যদি আমরা পূর্ণ সংখ্যায় প্রকাশ করতে পারি তাহলে ওই সমকোণী ত্রিভুজ কে পিথাগোরীয় ত্রিভুজ বলে। এবং ওই সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলোর দৈর্ঘ্য তিনটিকে ‘একত্রে পিথাগোরীয় ত্রয়‘ বলা হয়।

উদাহরণস্বরূপ ABC একটি সমকোণী ত্রিভুজ যার ভূমির দৈর্ঘ্য AB = ৬ সেমি, লম্বের দৈর্ঘ্য AC = ৮ সেমি এবং অতিভুজের দৈর্ঘ্য BC = ১০ সেমি। 

তাহলে ABC সমকোণী ত্রিভুজটিকে পিথাগোরীয় ত্রিভুজ বলা যায়। এবং যেহেতু ভুমি, লম্ব এবং অতিভুজের দৈর্ঘ্য গুলিকে পূর্ণ সংখ্যার দ্বারা অর্থাৎ যথাক্রমে ৬, ৮ , ১০ প্রকাশ করা।

তাই এই বাহু তিনটিকে একত্রে পিথাগোরীয় ত্রয় বলা হয়।

অতিভুজ কাকে বলে

যেকোনো সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণের বিপরীত বাহুকে অতিভুজ বলা হয়। সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের সূত্র জানতে হলে আগে আমাদের পিথাগোরাসের উপপাদ্য সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।

পিথাগোরাসের উপপাদ্য টি সম্পূর্ণ সমকোণী ত্রিভুজের বিশেষ ধর্মের উপর ভিত্তি করে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

পিথাগোরাসের উপপাদ্য

একটি সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল তার অন্য দুটি বাহুর ওপর ( অর্থাৎ ভূমি এবং লম্ব ) অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল দুটির মানের সমষ্টির সমান।

ধরি, ABC একটি সমকোণী ত্রিভুজ। যার সমকোণ এর সন্নিহিত দুটি বাহুর দৈর্ঘ্য অর্থাৎ ভূমির দৈর্ঘ্য = P ও লম্বের দৈর্ঘ্য = R । সমকোণী ত্রিভুজটির অতিভুজের দৈর্ঘ্য Q ।

পিথাগোরাসের উপপাদ্য অনুযায়ী Q2 = P2+R2 অর্থাৎ ( অতিভুজ )2 = ( ভূমি )2+( লম্ব )2

Q = P2 + R2

যেকোনো সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ নির্ণয়ের সূত্র = ( ভূমি )2+( লম্ব )2

যেকোনো সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ নির্ণয়ের সূত্র =   P2 + R2

সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল

সকল ত্রিভুজের ভূমি ও উচ্চতার গুণফলের অর্ধেকই = ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল।

ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল = ১/২( ভূমি × উচ্চতা ) বর্গ একক।

সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল ও ত্রিভুজটির ভূমি ও উচ্চতার গুণফলের অর্ধেক। সমকোণী ত্রিভুজের লম্বই হলো ত্রিভুজটির উচ্চতা।

অর্থাৎ সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল = ১/২( সমকোণের সন্নিহিত বাহু দুটির গুণফল ) বর্গ একক।

সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল =১/২( ভূমি × লম্ব ) বর্গ একক।

সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের উদাহরণ

ABC সমকোণী ত্রিভুজের ভূমি AB = ৩ সেমি, লম্ব AC = ৪ সেমি এবং অতিভুজ BC = ৫ সেমি।

অতএব, সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল = ১/২( ভূমি × লম্ব ) বর্গ একক

= ১/২( ৩ × ৪ ) বর্গ সেমি

= ৬ বর্গ সেমি

সমকোণী ত্রিভুজের পরিসীমা

সমকোণী ত্রিভুজের তিনটি বাহুর দৈর্ঘ্যের সমষ্টিকে সমকোণী ত্রিভুজের পরিসীমা বলে। অনুরূপভাবে বলা যায় সমকোণী ত্রিভুজের ভূমি, লম্ব এবং অতিভুজ এই তিনটি বাহুর যোগফল হলো ওই সমকোণী ত্রিভুজের পরিসীমা।

সমকোণী ত্রিভুজের পরিসীমা =( ভূমি + লম্ব + অতিভুজ ) একক।

ধরি একটি সমকোণী ত্রিভুজের ভূমি = X একক, লম্ব= Y একক অতিভুজ = Zএকক।

তাহলে ওই সমকোণী ত্রিভুজের পরিসীমা = ( ভূমি + লম্ব + অতিভুজ ) একক ।

=( X+ Y+Z ) একক ।

সমকোণী ত্রিভুজের পরিসীমার উদাহরণ

ধরি সমকোণী ত্রিভুজের ভূমি সেমি লম্ব সেমি অতিভুজ সেমি

সমকোণী ত্রিভুজটির পরিসীমা = ( ভুমি + লম্ব + অতিভুজ ) একক

= (৬ + ৮ +১০ ) সেমি = ২৪ সেমি

সমকোণী সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ কাকে বলে

যদি একটি ত্রিভুজ সমকোণী ত্রিভুজ হওয়ার সাথে সাথে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ ও হয়। তাকে সমকোণী সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ বলে।

যেকোনো সমকোণী ত্রিভুজের যেকোনো দুটি বা সমান হলে তাকে সমকোণী সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ বলে।

অনুরূপভাবে বলা যায় যে সকল সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের যেকোনো একটি কোণের মান ৯০° বা এক সমকোণ সেই সকল ত্রিভুজকে সমকোণী সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ বলে।

সমকোণী সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

  • এই ত্রিভুজের যে কোন একটি কোণের মান ৯০ ডিগ্রী
  • সমকোণ বাদে বাকি দুটি কোণ সূক্ষ্মকোণ অর্থাৎ ৯০ ডিগ্রী অপেক্ষা ছোট হয়।
  • সূক্ষ্মকোণ দুটির মান ৪৫ ডিগ্রী হয় কারণ ত্রিভুজটি সমদ্বিবাহু বলে।
  • সমকোণী সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের সমকোণ এর বিপরীত বাহুকে অতিভুজ বলে। সমকোণী ত্রিভুজের বৃহত্তম বাহুর নাম অতিভুজ।

সমকোণী ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

  1. অতিভুজ হলো সমকোণী ত্রিভুজের বিপরীত বাহু। সমকোণী ত্রিভুজের বৃহত্তম বাহু হলো অতিভুজ।
  1. সমকোণী ত্রিভুজের তিনটি বাহুর দৈর্ঘ্য যদি পূর্ণসংখ্যা হয় তাহলে তাকে পিথাগোরিয়ান ত্রয় বলে ।আর ত্রিভুজটিকে পিথাগোরিয়াম ত্রিভুজ বলে।
  1. সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণ বাদে বাকি দুটি কোণের সমষ্টি সর্বদা ৯০ ডিগ্রী।
  1. একটি সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণিক শীর্ষবিন্দু এবং অতিভুজের মধ্যবিন্দুকে সংযোজক রেখা দিয়ে সংযোগ করলে, ত্রিভুজটি যে দুটি ত্রিভুজে বিভক্ত হয়, ওই ত্রিভুজগুলি সর্বদা সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ হয়।
  1. সমকোণী ত্রিভুজের যদি দুটি বাহুর দৈর্ঘ্য জানা থাকে তাহলে অপর বাহুটির দৈর্ঘ্য নির্ণয় করা সম্ভব।
  1. সমকোণী ত্রিভুজের ভিত্তি পিথাগোরাসের উপপাদ্যের উপর নির্ভর।
  1. সমকোণী ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষবিন্দু দিয়ে যদি একটি বৃত্ত অঙ্কন করা হয় তাহলে সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ ঐ ত্রিভুজের ব্যাসের সমান।
  1. সমকোণী সমদ্বিবাহ ত্রিভুজের সমকোণের সন্নিহিত যেকোন বাহু ও অতিভুজের অনুপাত সর্বদা ১:√২ হয়।
  1. সমকোণী সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের সমকোণের সন্নিহিত দুটি বাহু দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান এবং অতিভুজ যেকোন একটি বাহুর √২ গুণ।
  1. একটি সমকোণী ত্রিভুজের সমকৌণিক শীর্ষবিন্দু এবং অতিভুজের মধ্যবিন্দুর সংযোজক রেখার দৈর্ঘ্য সর্বদা অতিভুজের অর্ধেক হয়।
  1. যদি সমকোণী ত্রিভুজের সমকন বাদে ওপর দুটি কোণের একটি আরেকটির দ্বিগুণ হলে ক্ষুদ্রতম কোণের বিপরীত বাহুর দ্বিগুণ অতিভুজের সমান হয়।
  1. সমকোণী ত্রিভুজের সমকৌণিক শীর্ষবিন্দু থেকে অতিভুজের ওপর একটি লম্ব অঙ্কন করলে যে দুটি ভিন্ন ত্রিভুজ উৎপন্ন হয়, ওই ত্রিভুজ দুটির ক্ষেত্রফল এবং প্রধান ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল পরস্পর সমানুপাতিক হয়।

সমকোণী ত্রিভুজের অপর নাম কি?

উঃ  সমকোণী ত্রিভুজের বাহু তিনটির দৈর্ঘ্য কে যদি আমরা পূর্ণ সংখ্যায় প্রকাশ করতে পারি তাহলে ওই সমকোণী ত্রিভুজ কে পিথাগোরীয় ত্রিভুজ বলে।

সমকোণী ত্রিভুজের ভূমি কাকে বলে

উঃ  সমকোণী ত্রিভুজের যে বাহুকে কেন্দ্র করে ত্রিভুজটির উচ্চতা নির্ণয় করা হয়, সমকোণী ত্রিভুজের ভূমি বলে।

সমকোণী বিষমবাহু ত্রিভুজ কাকে বলে

উঃ  যে সমকোণী ত্রিভুজের তিনটি কোণই অসমান তাকে সমকোণী বিষমবাহু ত্রিভুজ বলে।

সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণের বিপরীত বাহুকে কি বলে

উঃ  সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণের বিপরীত বাহুকে অতিভুজ বলে।

আশা করি সমকোণী ত্রিভুজ কাকে বলে? সমকোণী ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য এবং সমকোণী ত্রিভুজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনাটি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।

Post a Comment

0 Comments