অক্ষরেখা কাকে বলে | অক্ষরেখার বৈশিষ্ট্য

পৃথিবীতে নিরক্ষরেখার উভয় দিকে সমান অক্ষাংশ বিশিষ্ট ভূপৃষ্ঠের স্থানগুলি কে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টিত যে বৃত্তাকার কাল্পনিক রেখা দ্বারা সংযুক্ত করা হয় তাদের অক্ষরেখা বলে।

আজকে আমরা জানবো অক্ষরেখা কাকে বলে এবং অক্ষরেখার বৈশিষ্ট্য সমূহ। তাই এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।

অক্ষরেখা কাকে বলে

পৃথিবীতে নিরক্ষরেখার উভয় দিকে সমান অক্ষাংশ বিশিষ্ট ভূপৃষ্ঠের স্থানগুলি কে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টিত যে বৃত্তাকার কাল্পনিক রেখা দ্বারা সংযুক্ত করা হয় তাদের অক্ষরেখা বলে।

পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের যে সমস্ত স্থানের অক্ষাংশ সমান সেইসব স্থানকে বৃত্তাকার কাল্পনিক রেখা দিয়ে পরপর যোগ করলে যে রেখা পাওয়া যায় তাকে অক্ষরেখা বলে।


WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে নিরক্ষরেখার সমান্তরালে ১ ডিগ্রি অন্তর ৮৯ টি সমান্তরাল অক্ষরেখার বৃত্ত কল্পনা করা হয়েছে।

অক্ষরেখার বৈশিষ্ট্য

একই অক্ষাংশযুক্ত বৃত্তাকার কাল্পনিক রেখা গুলিকে অক্ষরেখা বলে। পরস্পর সমান্তরালে বিস্তৃত থাকে বলে অক্ষরেখা গুলির আরেক নাম সমাক্ষরেখা।

  • পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন: অক্ষরেখা গুলি পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত।

  • অক্ষরেখার আকৃতি: অক্ষরেখা গুলির আকৃতি পূর্ণ বৃত্তাকার।
  • অক্ষরেখার মান: অক্ষরেখার সর্বনিম্নমান ডিগ্রী এবং সর্বোচ্চ মান 90 ডিগ্রী।
  • অক্ষরেখার সংখ্যা: নিরক্ষরেখার উপর পাশে এক ডিগ্রি অন্তর 89 টি অক্ষরেখা পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের পূর্ব থেকে পশ্চিমে বৃত্তাকারে বিস্তৃত। নিরক্ষরেখা সহ পৃথিবীর দুটি গোলার্ধে মোট অক্ষরেখার সংখ্যা হল 179 = ( 1+89+89)।
  • অক্ষরেখার প্রকৃতি: নিরক্ষরেখার উভয় পার্শ্বে প্রতি এক ডিগ্রি অন্তর নিরক্ষরেখার সমান্তরালে অক্ষরেখা গুলি পূর্ব পশ্চিমে বিস্তৃত। অক্ষরেখা গুলি প্রত্যেকটি দ্রাঘিমা রেখাকে সমকোণে ছেদ করে।
  • সমান্তরাল অবস্থান: নিরক্ষরেখার সমান্তরালে প্রত্যেকটি অক্ষরেখা পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। এই কারণে একই অক্ষরেখায় অবস্থিত যে কোনো স্থান থেকে নিরক্ষরেখার দূরত্ব সর্বদা সমান হয়।
  • অক্ষরেখার পরিধি: অক্ষরেখা গুলির মধ্যে নিরক্ষরেখার পরিধি সর্বোচ্চ। নিরক্ষরেখা থেকে যতই দুই মেরুর দিকে যাওয়া যায় অক্ষরেখা গুলির পরিধি ক্রমশ ছোটো হতে থাকে। এক কথায় বলা যায়, অক্ষরেখা গুলির পরিধি সমান নয়।
  • অক্ষাংশ: একই অক্ষরেখায় অবস্থিত পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের যে কোনো স্থানের অক্ষাংশ সমান হয়।
  • অক্ষরেখাগুলির মধ্যবর্তী দূরত্ব: অক্ষরেখা গুলি পরস্পর সমান্তরাল। সেই জন্য যে কোনো ২টি অক্ষরেখার মধ্যবর্তী দূরত্ব সর্বদা সমান হয়।
  • মহাবৃত্ত: নিরক্ষরেখা হল একটি প্রধান অক্ষরেখা। একে মহাবৃত্ত বলা হয়।

পাঁচটি প্রধান প্রধান অক্ষরেখা

1.নিরক্ষরেখা

2.কর্কটক্রান্তিরেখা

3.মকরক্রান্তি রেখা 

4.সুমেরুবৃত্ত 

5. কুমেরু বৃত্ত 

পাঁচটি প্রধান প্রধান অক্ষরেখা

অক্ষরেখা মান ও বৈশিষ্ট্য
নিরক্ষরেখা এর মান 0° নিরক্ষরেখাকে মহাবৃত্ত বলে।মহাবিষুব ও জলবিষুব হয়।
কর্কটক্রান্তি রেখা এর মান সাড়ে 23° উত্তর। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। কর্কট সংক্রান্তি হয়।
মকরক্রান্তি রেখা এর মান সাড়ে 23° দক্ষিণ। দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত। মকর সংক্রান্তি হয়।
সুমেরুবৃত্ত এর মান সাড়ে 66° উত্তর। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত।
কুমেরু বৃত্ত এর মান সাড়ে 66° দক্ষিণ। দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত।

অক্ষরেখার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব

১ ) গোলার্ধ ও অবস্থান নির্ণয়: অক্ষরেখা গুলির সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের যেকোন স্থানের অক্ষাংশ জানা যায়। নিরক্ষরেখার উত্তর দিককে উত্তর গোলার্ধ এবং দক্ষিণ গোলার্ধ বলে। 

অর্থাৎ এককথায় অক্ষরেখা গুলির সাহায্যে কোনো স্থান কোন গোলার্ধে অবস্থিত তা জানা যায়।

২) স্থানীয় সময় নির্ণয়:অক্ষাংশ অনুযায়ী সূর্যরশ্মির পতন কোনের তারতম্যের কারণে কোনো স্থানের স্থানীয় সময়ের পরিবর্তন হয়।

৩) তাপমন্ডলের সৃষ্টি : ভূপৃষ্ঠের কোন কোন স্থানের অক্ষাংশের মান বাড়ার সাথে সাথে সূর্য রশ্মির পতন কোণের আলো বেড়ে যায়।

নিরক্ষরেখা থেকে যতই কুমেরু বৃত্ত বা সুমেরু বৃত্তের দিকে যাওয়া যায় সূর্যরশ্মি তত তির্যকভাবে পড়ে। এইভাবে পৃথিবীতে তিনটি তাপমন্ডলের সৃষ্টি হয়েছে।

(i) উষ্ণ মন্ডল: উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে (0° থেকে সাড়ে 23°)।
(ii) নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল: উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে (সাড়ে 23° থেকে সাড়ে 66°)।
(iii) হিম মন্ডল: উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে (সাড়ে 66° থেকে 90°)।

৪) জলবায়ু নির্ধারণ:

পৃথিবীর বিভিন্ন তাপমন্ডলে অক্ষাংশ ভেদে বিভিন্ন প্রকারের জলবায়ু দেখা যায়।নিরক্ষীয় অঞ্চলে নিরক্ষীয় জলবায়ু,দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে ক্রান্তীয় জলবায়ু এবং মেরু বৃত্তীয় অঞ্চলে মেরু জলবায়ু।

আশা করি অক্ষরেখা কাকে বলে এবং অক্ষরেখার বৈশিষ্ট্য এই পোস্টটি সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পেরেছেন।

Post a Comment

0 Comments